পবিত্র কুরআনে ৫ ওয়াক্ত নামাজের দলীল

কুরআন 

হিজরতের পূর্বে মি’রাজ রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। এর পূর্বে দু’ ওয়াক্ত সালাত ফরয ছিল। সূর্যোদয়ের পূর্বে অর্থাৎ- ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। আর সূর্যাস্তের পূর্বে অর্থাৎ- ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ ’’সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার প্রভুর প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা বর্ণনা করো’’- (সূরাহ্ আল গাফির/মু’মিন ৪০: ৫৫)।

আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন, ‘তুমি সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম করো এবং ফজরের নামাজ (কায়েম করো)।নিশ্চয়ই ফজরের নামাজে সমাবেশ ঘটে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৮)
সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত জোহর, আছর, মাগরিব ও এশার নামাজের কথা বলা হয়েছে। আর ফজরের নামাজকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা এর বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব নির্দেশ করে।

এবং তুমি নামাজ কায়েম করো দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক আমল মন্দ কর্মগুলোকে দূর করে দেয়। স্মরণকারীদের জন্য এটি একটি স্মারক।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৪)
এই আয়াতে বর্ণিত দিনের দুই প্রান্ত ও রাতের কিছু অংশের নামাজ হলো ফজর, জোহর, আছর, মাগরিব ও এশা।

তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৩)

এবং তোমরা নামাজ কায়েম করো ও জাকাত আদায় করো এবং (স্মরণ রেখো) তোমরা যেকোনো সৎকর্ম নিজেদের কল্যাণার্থে সম্মুখে প্রেরণ করবে, আল্লাহর কাছে তা পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যেকোনো কাজ করো আল্লাহ তা দেখছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১০)

নবী (সা.)-কে সম্বোধন করে আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘ওহির মাধ্যমে তোমার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা তিলাওয়াত করো ও নামাজ কায়েম করো। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে আর আল্লাহর জিকিরই সবচেয়ে বড়। আর তোমরা যা করো, আল্লাহ তা জানেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)

লোকমান হাকিম (রহ.) তাঁর সন্তানকে নানা বিষয়ের উপদেশ দিতেন, তার সেসব উপদেশ দানের কথা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। প্রিয় সন্তানকে প্রদত্ত অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ছিল নামাজের ব্যাপারে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে বৎস, নামাজ কায়েম করো, মানুষকে সৎকাজের আদেশ করো, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার যে কষ্ট দেখা দেয়, তাতে সবর করো। নিশ্চয়ই এটা অত্যন্ত হিম্মতের কাজ।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৭)

হে নবী পত্নীরা, তোমরা সাধারণ কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো, তাহলে তোমরা কোমলভাবে কথা বোলো না, অন্যথায় যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে লালসায় পড়বে। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলো এবং তোমাদের ঘরে অবস্থান করো। প্রাচীন জাহিলিয়াতের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না। এবং নামাজ কায়েম ও জাকাত আদায় করো। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের উত্তমভাবে পবিত্র করতে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩২-৩৩)

হাদিস

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশে) বললেন, আচ্ছা বলো তো, তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার কাছে যদি একটি নদী থাকে, যাতে সে নদীতে দিনে পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, না, কোন ময়লা থাকবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ দৃষ্টান্ত হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের। এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আহ্ হতে অপর জুমু’আহ্ পর্যন্ত এবং এক রমাযান হতে আরেক রমাযান পর্যন্ত সব গুনাহে্র কাফফারাহ্ হয়, যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। (মুসলিম)

উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), যা আল্লাহ তা’আলা (বান্দার জন্য) ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ’ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *