সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা দেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমারের উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কিছু তথ্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. সেন্ট মার্টিন দ্বীপ:
- সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি ছোট প্রবাল দ্বীপ।
- এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মিয়ানমারের উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।
- স্থানীয় ভাষায় সেন্ট মার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়।
- দ্বীপটির ভূ-প্রকৃতি মূলত প্রবাল শিলা দ্বারা গঠিত। তবে কিছু কিছু জায়গায় বালির স্তরও দেখা যায়।
- সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার।
- দ্বীপটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ০.৫ কিলোমিটার।
- দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৮০০০ জন।
২. জীববৈচিত্র্য:
সেন্টমার্টিন দ্বীপের চারপাশের সাগরে নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য মাছ হলো:
- বোল মাছ: এই মাছটি সেন্টমার্টিনের একটি বিশেষ আকর্ষণ। ধূসর রঙের ওপর ছোপ ছোপ লাল দাগ এবং নীল রঙের চোখ বিশিষ্ট এই মাছটি মূলত প্রবাল পাথরের এলাকায় পাওয়া যায়।
- রূপচাঁদা: রূপচাঁদা একটি সামুদ্রিক মাছ যা খেতে খুবই সুস্বাদু।
- লবস্টার: লবস্টার একটি সুস্বাদু এবং মূল্যবান সামুদ্রিক খাবার।
- কাঁকড়া: বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া সেন্টমার্টিনের চারপাশের সাগরে পাওয়া যায়।
- এছাড়াও রয়েছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল করাল, রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ, উড়ুক্কু মাছ ইত্যাদি।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ১২০ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রজাতি হলো:
- বড় টিকিপানচিল: এটি একটি সামুদ্রিক পাখি, যা সেন্টমার্টিনে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।
- পাতিহাঁস: শীতকালে এই পাখিগুলো সেন্টমার্টিনে আসে।
- পানকৌড়ি: এই পাখিগুলো সেন্টমার্টিনের চারপাশের জলে মাছ শিকার করে।
- সাদা বক: এই পাখিগুলো সেন্টমার্টিনের উপকূলীয় এলাকায় দেখা যায়।
- এছাড়াও, এই দ্বীপে বিভিন্ন প্রজাতির গাংচিল, চড়ুই, শালিক, এবং অন্যান্য পাখিও দেখা যায়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল:
- সামুদ্রিক কচ্ছপ (গ্রিন টার্টল ও অলিভ টার্টল প্রজাতি): এই দ্বীপটি সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ার অন্যতম প্রধান স্থান।
- বিভিন্ন প্রজাতির সাপ: সেন্টমার্টিনে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ দেখা যায়, যার মধ্যে কিছু প্রজাতি বিষধর।
- গিরগিটি: এই দ্বীপে বিভিন্ন প্রজাতির গিরগিটিও দেখা যায়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রজাতি হলো:
- কুকুর: সেন্টমার্টিনে প্রচুর সংখ্যক কুকুর দেখা যায়।
- বিড়াল: বিভিন্ন প্রজাতির বিড়ালও এই দ্বীপে দেখা যায়।
- ইঁদুর: বিভিন্ন প্রজাতির ইঁদুর সেন্টমার্টিনের চারপাশের এলাকায় দেখা যায়।
- বাদুড়: বিভিন্ন প্রজাতির বাদুড়ও এই দ্বীপে দেখা যায়।
এছাড়াও, সেন্টমার্টিনের চারপাশের সাগরে বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়, যেমন:
- ডলফিন: বিভিন্ন প্রজাতির ডলফিন সেন্টমার্টিনের চারপাশের সাগরে দেখা যায়।
- তিমি: কখনও কখনও তিমিও সেন্টমার্টিনের চারপাশের সাগরে দেখা যায়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রবাল দেখা যায়। সেন্টমার্টিনের প্রবালগুলো হলো:
- পাথুরে প্রবাল: এই প্রবালগুলো শক্ত এবং পাথরের মতো দেখতে হয়।
- নরম প্রবাল: এই প্রবালগুলো নরম এবং নমনীয় হয়।
- শাখা-প্রশাখা যুক্ত প্রবাল: এই প্রবালগুলোর শাখা-প্রশাখা থাকে এবং দেখতে গাছের মতো হয়।
- গোলাকার প্রবাল: এই প্রবালগুলো গোলাকার এবং গুচ্ছ আকারে থাকে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল দেখা যায়। প্রবালগুলো বিভিন্ন রঙের হয়, যেমন:
- সাদা
- গোলাপী
- হলুদ
- বাদামী
সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রজাতি হলো:
- বিভিন্ন প্রজাতির ঝিনুক
- বিভিন্ন প্রজাতির শামুক
- কড়ি
সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে শামুক-ঝিনুক পাওয়া যায়। এর কারণ হলো:
- প্রাকৃতিক পরিবেশ: সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ শামুক-ঝিনুকের জন্য আদর্শ।
- প্রবাল প্রাচীর: সেন্টমার্টিনের চারপাশের প্রবাল প্রাচীর শামুক-ঝিনুকের আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- নারিকেল গাছ: সেন্টমার্টিন দ্বীপের অন্যতম প্রধান উদ্ভিদ হলো নারিকেল গাছ। এই দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল গাছ দেখা যায়।
- কেওড়া গাছ: দ্বীপের দক্ষিণ দিকে প্রচুর পরিমাণে কেওড়ার ঝোপ-ঝাড় আছে।
- শিমুল গাছ
- আম গাছ
- সুপারি গাছ
- বাবলা গাছ
- কড়ই গাছ
- কেয়া গাছ: সেন্টমার্টিন দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী উদ্ভিদ হলো কেয়া গাছ।
- ম্যানগ্রোভ গাছ: দক্ষিণ দিকে কিছু ম্যানগ্রোভ গাছও দেখা যায়।
৩. বিরোধ:
- সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মালিকানা নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।
- মিয়ানমার দাবি করে যে, দ্বীপটি তাদের সীমানার মধ্যে অবস্থিত।
- তবে বাংলাদেশ এই দাবি অস্বীকার করে এবং বলে যে, দ্বীপটি বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
৪. সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইতিহাস:
- স্থানীয় জেলেদের মতে, প্রায় ২৫০ বছর আগে আরব বণিকদের জাহাজ এই দ্বীপের কাছাকাছি ডুবে যায়।
- জাহাজের কিছু নাবিক সাঁতরে এই দ্বীপে এসে বসবাস শুরু করে।
- এই দ্বীপে প্রচুর নারিকেল গাছ ছিল বলে স্থানীয় লোকেরা এই দ্বীপকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে ডাকত।
- পরবর্তীকালে, ব্রিটিশ শাসনামলে এই দ্বীপের নামকরণ করা হয় সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।
৫. সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
- সেন্ট মার্টিন দ্বীপ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
- দ্বীপের চারপাশের নীল জলরাশি, প্রবাল প্রাচীর এবং নারিকেল গাছের সারি পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
- সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।
তথ্যসূত্র: Gemini


