যেসব কারণে অল্প বয়সে আপনার যৌবন হারিয়ে যাচ্ছে।
আজকাল চারপাশে নোংরা দৃশ্য, পর্ন এবং অশালীন পোশাক-আশাকের কারণে অনেকেই যৌন উত্তেজনার সম্মুখীন হচ্ছেন। যার ফলে চোখে দেখা দৃশ্য আর ভালো লাগে না, তাদের প্রয়োজন সরাসরি চাহিদা মেটানো। কিন্তু যখন তারা সরাসরি চাহিদা মেটাতে পারছেন না, তখন তারা বিভিন্ন অশ্লীল পদ্ধতিতে যৌন চাহিদা মেটাচ্ছেন। সবচেয়ে বড় অশ্লীল পদ্ধতি হচ্ছে হস্তমৈথুন। আর এসবের কারণে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। চলুন দেখা যাক এর ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী।
শারীরিক কারণে:
- হরমোনাল সমস্যা: টেস্টোস্টেরন হরমোনের কম বা অস্বাভাবিক স্তরের কারণে যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে বা যৌন কার্যক্ষমতা বিঘ্নিত হতে পারে।
- মধুমেহ (ডায়াবেটিস): সকল রোগের লিডার হচ্ছে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসের কারণে রক্তচাপ, স্নায়ু সমস্যা, এবং রক্তপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে যৌন ক্ষমতা দিন দিন কমে যায়।
- হৃদরোগ: হৃদরোগের কারণে রক্ত প্রবাহের সমস্যা হতে পারে, যা যৌনাঙ্গে রক্ত প্রবাহ কমাতে পারে। বিশেষ করে পুরুষরা (উত্থান জনিত সমস্যা) এই রোগে বেশি ভোগেন।
- ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত মেদ শরীরের বিভিন্ন অংশে সমস্যার সৃষ্টি করে, যার প্রভাব যৌন সক্ষমতার উপর পড়ে। পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাব, নিয়মিত হাটার অভাবের এই সমস্যা হয়।
- অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্যের ব্যবহার: আমাদের সমাজে মাদক অতি পরিচিত একটা মরণ ব্যাধি। এই রোগ থেকে ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে কেউ মুক্তি পাচ্ছে না। অতিরিক্ত মদ্যপান বা মাদকাসক্তি যৌন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- সঙ্গী/সঙ্গিনীর সাথে ঝগড়া: তুচ্ছ বিষয় নিয়ে একে অপরের সাথে নিয়মিত ঝগড়া করলে উভয়েরই যৌন আকাঙ্খা কমে যায়। নির্দিষ্ট একটী সময়ে গিয়ে এটি একটি রোগে পরিণত হয়।
- অধিক পরিমাণে পিল খাওয়া: জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক নারী নিয়মিত পিল (জন্মনিয়ন্ত্রণের ঔষধ) খান। এটি যৌন জীবনে তৈরি করতে পারে নানা রকম সমস্যা। এই ঔষধ বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে বিষণ্ণতা তৈরি হতে পারে এবং এলার্জি জনিত সমস্যা হতে পারে, যার কারণে যৌন চাহিদা কমে যায়।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা: এটি একটি জটিল সমস্যা। আপনার যদি হাঁপানি রোগ থাকে তাহলে যেকোন কাজে অতি অল্প সময়ে হাপিয়ে যাবেন এমনকি শ্বাস—প্রশ্বাসের স্বল্পতার কারণে যৌন আকাঙ্খা নষ্টও হয়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত হস্তমৈথুন ও পর্ণ দেখা: আজকাল অল্পবয়সের ছেলে/মেয়েরা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অতিরক্ত হস্তমৈথুন ও পর্ণ দেখার কারণে। হস্তমৈথুনের কারণে যেসব ক্ষতি হয়- (১) শক্তির অভাব ও ক্লান্তি (২) যৌন অঙ্গের সমস্যা (৩) ইরেকটাইল ডিসফাংশন অর্থাৎ দ্রুত বীর্যপাত, যা বর্তমানে ছেলেদের প্রধান এবং সবথেকে বড় সমস্যা (৪) আত্নবিশ্বাসের অভাব (৫) দুঃখ, বিষণ্ণতা (৬) একাকীত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা (৭) যৌন আগ্রহ কমে যাওয়া (৮) যৌন সম্পর্কের অস্বস্তি (৯) হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (১০) ডোপামিনের অতিরিক্ত মুক্তি। অর্থাৎ ডোপামিন নামক একটি হরমোন আছে যেটা পর্ণ বা উত্তেজিত কিছু দেখার সময় নির্গত হয়। অতিরক্ত হস্তমৈথুন এবং পর্ণ দেখার কারণে এই হরমোনের অতিরক্ত ক্ষয়ের ফলে যৌন চাহিদাঁ অনেক আগেই ফুরিয়ে যায়।
মানসিক কারণে:
- মানসিক চাপ (স্ট্রেস): কাজের চাপ, পারিবারিক সমস্যা, ক্যারিয়ার নিয়ে দুঃশ্চিন্তা বা অন্যান্য মানসিক চাপ যৌন ইচ্ছাকে কমিয়ে দিতে পারে। বলা হয়ে থাকে দুঃশ্চিন্তা সকল রোগের মূলে রয়েছে দুঃশ্চিন্তা।
- আত্মবিশ্বাসের অভাব: নিজের শারীরিক অবস্থান বা পারফরম্যান্সের বিষয়ে অস্বস্তি বা আত্মবিশ্বাসের অভাব যৌন সমস্যার কারণ হতে পারে। মনে মনে ভাবতে পারেন আমি আমার সঙ্গিনীর সাথে পেরে উঠবো কিনা বা কিভাবে কি করবো। এসব চিন্তাভাবনা আপনাকে বিপাকে ফেলে দিবে এবং যৌন আকাঙ্খা কমিয়ে দিবে।
- দুঃখ বা বিষণ্নতা: মানসিক অসুস্থতা যেমন বিষণ্নতা বা দুঃখ, হতাশা যৌন ইচ্ছাকে কমিয়ে দিতে পারে।
- যৌনতা সম্পর্কিত দুশ্চিন্তা: অতীতের কোনো নেতিবাচক অভিজ্ঞতা বা যৌন সম্পর্কের ভয়। কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো এবং সেখানে অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা হয়েছিল এটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কমিয়ে দিতে পারে আপনার যৌন ইচ্ছা।
জীবনধারা ও পরিবেশগত কারণে:
- ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণে শারীরিক এবং মানসিক শক্তি কমে যেতে পারে, যা যৌনক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
- ব্যস্ততা বা অবসর সময়ের অভাব: অধিক কাজের চাপ বা অতিরিক্ত ক্লান্তি যৌনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- স্মোকিং (ধূমপান): ধূমপান রক্তনালীর সমস্যা সৃষ্টি করে, যা যৌনক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে।
চিকিৎসা:
যদি কোন নারী/পুরুষ এধরণের যৌন সমস্যার সম্মুখীন হন, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। ডাক্তার বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা এবং মানসিক পর্যালোচনা করে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন। যদি জটিল কোন সমস্যা হয় তাহলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সাধারণত এধরনের রোগ নিয়ে দেরি করলে সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।


