জুলিয়াস সিজারের একনায়কতন্ত্রের ইতিহাস

আমরা আগে অনেক এক নায়ক তন্ত্রের কথা শুনেছি কিন্তু একনায়কতন্ত্রের যে বিকাশ ঘটিয়েছিলেন তার কথা কি জানি? Vini vici vidi…. লাতিন বাক্যটির বাংলা অর্থ “এলাম, দেখলাম, জয় করলাম” একজন বিখ্যাত সম্রাট ফার্নেসের যুদ্ধে ( Battle of zela) দ্রুত ও সফল বিজয়ের বর্ণনা করতে গিয়ে এই উক্তিটি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি গাইয়াস জুলিয়াস সিজার। জুলিয়াস সিজার রুমের একজন বিখ্যাত সম্রাট তিনি ৪৬ অব্দে রোমের একনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন। জুলিয়াস  সিজারের উত্থান কিন্তু হঠাৎ করে হয়নি এর পিছনে একটি ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে।

৭৯ অব্দে সে সময় রোমে গৃহযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব চলছে। ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতার প্রথম সারিতে এসে দাঁড়ান বিখ্যাত যোদ্ধা পম্পে  এবং জুলিয়াস সিজার। এ সময় সিরিয়া ও  প্যালেস্টাইন বিজয়ের জন্য পম্পে যথেষ্ট খ্যাতি  ছিল গলের গর্ভনর হিসাবে নিয়োজিত জুলিয়াস সিজার বেলজিয়াম ও ফ্রান্সকে রোমের সঙ্গে যুক্ত করতে সামরিক দক্ষতা প্রদর্শন করেন। তুল্লার পতনের পর মূলত 78 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই রুমের একনায়ক হিসেবে পম্পের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। ৫২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম রোমের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার জন্য একমাত্র কনসার্ট হিসেবে ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার প্রদান করে।

জুলিয়াস সিজার কে রাষ্ট্রীয় সূত্র বলে ঘোষণা করা হয় এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাহীন করার জন্য পমপে সিনেটের এক অংশের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন ফলে পম্পেও সিজারের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যায়।

৪৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রুবিকন অতিক্রম করে রোমের দিকে যাত্রা শুরু করে ইতালির ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সৈন্য সমাবেশ করা হয়।

৪৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে দুই নেতার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। পম্পে পরাজিত হন। অতঃপর জুলিয়াস সিজার মিশরে গিয়ে মিশর সাম্রাজ্ঞি রানী ক্লিওপেট্রোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে কিছুদিন অবস্থান করেন। কিছুকাল পরে জানা যায় যে মিশরের রাজা নিয়োজিত চোরের হাতে পম্পের মৃত ঘটে।  রোমে প্রজাতন্ত্রের এক নয় হিসেবে ৪৬ খ্রিস্টাব্দে এভাবেই জুলিয়াস সিজার প্রতিষ্ঠিত হন।  এতদিন জিবিত থাকবেন রুমের এখনো হিসেবে তিনি অধিষ্টিত থাকবেন। তিনি ঘোষণা করেন যে বৈদেশিক রাষ্ট্রের সাথে রোমের সম্পর্ক কি হবে তা নিরূপণ করবে সিজার। নিজে যুদ্ধ- ঘোষনা সন্ধি ক্ষমতাও থাকবে সিজারের হাতে এমনকি যে কোন কর্মচারী নিয়োগ সিজারের অনুমতি গ্রহণ কেউ বাধ্যকতা মূলক করে। সিলেটের অনুমোদনের রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা সিজারের হাতে নাস্তু হয় এবং রুমে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় যা নিজেকে ইম্পারেটর উপাধিতে ভূষিত করেন, যার অর্থ- অধিপতি। সরকারি গণপরিষদ ও সিনেটের সিজারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

জুলিয়াস সিজারের সংস্কার সমূহ রোমের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। তিনি রাষ্ট্রকে শাসন করেন মাত্র দুই বছর কিন্তু এর স্বল্পকালের সময়ে তিনি তার সংস্কার প্রস্তাবিত কর্মসূচি মাধ্যমে নিজের অসাধারণ যোগ্যতা ও মিথ্যার পরিচয় দিতে সক্ষম হন। তার সংস্কার সমূহ নিম্নরূপ-

১. পিজাটা সমর্থক প্রদেশ সমূহের জনগণকে বিশেষ করে স্পেন ও গোয়ালের জনগণকে রোমান নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেন একারণে সব এলাকার জনগণের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হয়। উল্লেখ্য হিসেবে এলাকা রোম সাম্রাজ্যভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও এসব এলাকার অধিবাসীদের এতদিন রোমান নাগরিকদের হিসেবে স্বীকার করা হতো না।

২. গলস পেন উত্তরা আফ্রিকার কমপক্ষে বৃষ্টি উপনিবেশ স্থাপন করে এবং ইতালি ও রোমের অন্যান্য অ্রাবৃত সরকারি জমিতে যুদ্ধের সৈনিক ও প্রায় ৮০ হাজার দরিদ্র কর্মহীন শহরবাসীকে পুনর্বাসন করেন। এর মধ্যে সাগর অঞ্চলের রোম সংস্কৃতি প্রসারে উপনিবেশ গুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে।

৩. গ্রিক জ্যোতির্বিদদের সহযোগিতায় তিনি প্রচলিত ক্যালেন্ডারের সংস্কার করে নতুন ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। উল্লেখ ৩৬৫ দিনে এক বছর এবং প্রতি চার বছরের সাথে একদিন যোগ করে তিনি যে নতুন ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেছিলেন রথ বদল হয়ে বর্তমানে প্রচলিত আছে সামান্য পরিবর্তন সাধন করে বর্তমান আকার দান করেন।

৪. তিনি পুরাতন আইনসমূহ সংগ্রহ করে সংকলন করে তার এই সংকলনের ফলে পরবর্তীকালে গৃহত আকারে রোমান আইন সংকল্প পরিবর্তন সহজ হয়েছিল।

৫. সেনের প্রতিনিধির সংখ্যা ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৯০০ তে উন্নতি করা হয় এবং প্রতি প্রদেশ থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে সিনিয়র প্রতিনিধি প্রেরণ করার ব্যবস্থা করেন।

৬. রাষ্ট্রের সকল দুস্থ নাগরিকদের তালিকা তৈরি করেন এবং তাদেরকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে খাদ্যশস্য বন্টনের সুস্থ ব্যবস্থা চালু করেন।

একজন এক নায়ক হওয়ার শর্তেও স্বল্প সময়ে উপযুক্ত সংস্কার সমূহের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের সশস্ত্র ছিলেন কিন্তু আইনসভার ওপর তার একক কর্তৃত স্থাপন ও একের পর এক ক্ষমতা করে রাষ্ট্রের উপর সার্বভৌম ব্যক্তিগত অধিকার স্থাপন করায় ব্রুটাসের নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের সমর্থকগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে অতঃপর সিনেটের অধিবেশন চলাকালে ৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ১৫ মার্চ ও ব্রুটাস ও কেসিয়াসের ছুরিকাঘাতে জুলিয়াস সিজারের নিহত হন। ফলে এক সেনাপতি দূরদর্শী এক রাজনীতিবিদ ও রাজনীতির জীবনের অসামান্য সফলতা লাভকারি এক লড়াকু সৈনিকের পতন ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *