পানিতে ভিজে থাকতে কার না ভালো লাগে? বিশেষ করে গরমের দিনে যখন রোদে তাপে পুরো শরীরের জ্বলে যায় তখন পানি যেন এক শান্তির জায়গা। কিন্তু আপনি কি কখনো লক্ষ করেছেন অনেকক্ষণ পানিতে ভিজে থাকার পর আমাদের হাত-পায়ের চামড়া গুলো কুঁচকে যাচ্ছে কেন? এই কুঁচকে যাওয়া চামড়া দেখে আমরা অনেকেই ভয় পেয়ে যাই এবং মনে করি এটি হয়ত আমাদের শারীরিক কোন সমস্যা। কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে, এটি কোনো ভয় পাওয়ার কারণই নয়? চামড়া কুঁচকে যাওয়া নিয়ে বিজ্ঞান যা বলে তা শারীরিক ও স্নায়ুবিদ্যার (neurology) ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করা যায়। এটি মূলত আমাদের শরীরের ত্বকের কাঠামো, স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম, এবং জল শোষণ প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে।
আমাদের ত্বকের বাইরের স্তর (এপিডার্মিস) কেরাটিন নামক একটি প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে, যা পানি শোষণ করতে সক্ষম। দীর্ঘ সময় পানিতে ত্বক ডুবিয়ে রাখলে এই স্তর অতিরিক্ত পানি শোষণ করে যার ফলে ত্বক ফুলে যায়। ফুলে যাওয়া অংশের নিচে থাকা স্তরগুলো একই রকম থাকে, ফলে উপরিভাগ কুঁচকে যায়। এর পেছনে স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকাও থাকতে পারে।
বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, চামড়া কুঁচকে যাওয়া একটি স্নায়ুতন্ত্র-নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া। যখন হাত বা পা পানিতে ডুবানো হয়, তখন সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র (Sympathetic Nervous System) রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে। রক্তনালী সংকুচিত হওয়ার ফলে ত্বকের নিচের অংশ সংকুচিত হয় এবং বাইরের স্তরে ভাঁজ পড়ে যায়।
অন্য এক গবেষণায় দেখা যায়—
বিবর্তনীয় কারণেও এমন হতে পারে। এটি একটি বিবর্তনীয় অভিযোজন (Evolutionary Adaptation)। প্রাচীনকালে মানুষের পূর্বপুরুষদের পানিতে খাবার সংগ্রহ বা ভেজা জায়গায় চলাফেরার জন্য এই পরিবর্তন এসেছে। ত্বক কুঁচকে যাওয়ার ফলে ভেজা অবস্থায় পিচ্ছিল জিনিস ধরা অনেক সহজ হয়।
আবার আরেকটি কথা, পানিতে ভিজার ফলে শরীরের সব জায়গায় কিন্তু এরকম কুচকে ফুলে যায় না? এটি প্রধানত হাতের তালু কিংবা পায়ের পাতা-তে ঘটে, কারণ এই অংশগুলোতে ত্বকের বাইরের স্তর পুরু এবং বেশি কেরাটিনযুক্ত হয়ে থাকে। শরীরের অন্য জায়গায় ত্বক পাতলা হওয়ায় সেখানে কুঁচকে যাওয়া দেখা যায় না।
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, চামড়া কুঁচকে যাওয়া একটি কার্যকর প্রতিক্রিয়া, যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করার একটি পদ্ধতি।
উদাহরণ: যদি কারও স্নায়ুতন্ত্র ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে তার ত্বক পানিতে ঠিক মত কাজ করে না, এই কারণে এটি স্নায়ুজনিত কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য একটি উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ কারো স্নায়ু কাজ করছে কিনা সেটা পরীক্ষা করার জন্য পানিতে অনেক্ষণ ভিজে থাকতে পারেন। যদি স্নায়ু ঠিকমত কাজ করে তাহলে চামড়া কুঁচকে যাবে, অন্যথায় কুঁচকে যাবেনা।
চামড়া কুঁচকে যাওয়া একে স্বাভাবিক ক্ষণস্থায়ী শারীরিক প্রতিক্রিয়া বলে যা আমাদের শরীরের অভিযোজন ক্ষমতা এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা প্রকাশ করে ওদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষেত্র যা মানব দেহের বিবর্তন এবং শারীরিক কার্যক্রম বুঝতে সাহায্য করে। আবার অনেক সময় দেখা যায় পানিতে ভিজে থাকায় কারণেই শুধু কুঁচকে যাওয়ার সমস্যা হচ্ছে না আমরা করতে যাচ্ছি এর পেছনে রয়েছে শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি। ভিটামিন সি, এ, ই এর অভাব পাশাপাশি পানি পান না করলেও ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় মিনারেল জিংকের ঘাটতি হলেও ত্বক শুষ্ক ও কুঁচকে যেতে পারে। এসব ভিটামিনের অভাবে ত্বকের স্থিতিশীলতা হারায়, ত্বকে বলি রেখা, ফাটল দেখা দেয়, চামড়া ফেটে যায় সাথে আরো অনেক সমস্যা হতে পারে। পানিতে বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখার ফলে কোন সমস্যা না হলেও ভিটামিনের অভাবে যে চামড়া কুচকে যাচ্ছে শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে তা এক বিরাট সমস্যা। তাই আমাদের বেশি বেশি ভিটামিন ই, এ, সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- লেবু, কমলা, আমলকি, পেঁপে, ব্রোকলি, বাদাম, সূর্যমুখী তেল,, আমন্ড, পালং শাক, কুমড়া, মিষ্টি আলু, ডিম, দুধ, কলা ইত্যাদি খেতে হবে।


